Add

লবঙ্গের উপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম, অপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া: Clove

লবঙ্গের যতো উপকারিতা: 

clove
চিত্র:সংগ্রহীত।

মসলা হিসেবে লবঙ্গ সকলের পরিচিত। এর ইংরেজি নাম Clove এবং এর বোটানিকাল নাম: Syzygiumaromaticum। এটিকে বিভিন্ন স্থানে লং বলেও ডাকা হয়।  এটিতে আছে  জীবাণুনাশক এবং ব্যাথা  নাশক গুণাগুণ।

প্রতি ১০০ গ্রাম লবঙ্গে আছে ৬৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৬ গ্রাম প্রোটিন, ১৩ গ্রাম টোটাললিপিড, ২ গ্রাম সুগার, ২৭৪ কিলো-ক্যালোরি শক্তি ও ৩৩ গ্রাম ডায়েটারিফাইবার। 

এতে ভিটামিনের মধ্যে আছে ভিটামিন B-৬, B-১২, C,  K,  D,  A,  E, থায়ামিন, রাইবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, ইত্যাদি। 

তাছাড়া এতে আছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিঙ্ক ইত্যাদি।



লবঙ্গ খাওয়ার উপকারিতা: 

১। সর্দি–কাশি ও ঠাণ্ডা সারাতে: সর্দি-কাশির ওষুধ হিসাবে লবঙ্গ বহু বছর ধরেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। লবঙ্গ চিবিয়ে তার রস গিলে খেলে বা লবঙ্গ মুখে রেখে চুষলে সর্দি, ঠাণ্ডা-কাশি, গলাফুলে ওঠা,অ্যাজমা, আর শ্বাসকষ্টের সমাধান পাওয়া যায়।

২। মাথা ব্যথা কমায়: আমাদের বিভিন্ন সময় ঠান্ডার কারণে শ্লেষ্মা বেড়তে দেখা যায়। এ ধরনের মাথা ব্যথা বা মাথার রোগ দেখা দিলে তা  কমাতে লবঙ্গের চা  অনেক বেশি কার্যকর। এক কাপ চা য়ে ২-৩ টা লবঙ্গ নিন। সম্ভব হলে সামন্য আদা দিয়ে চা বা গরম পানি খেলে মাথা ব্যাথা কমতে সাহায্য করে। 

৩। ব্রণ সারাতে: ব্রণ সারাতে লবঙ্গের ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ব্রণ সারাতে বা ব্রণের দাগ দূর করতে লবঙ্গের পেস্ট ব্রণের ওপরে কিছু সময় দিয়ে রাখুন। তাছাড়া লবঙ্গ খেলেও ব্রণ হওয়া থেকে রেহায় পাওয়া যায়। 

৪। খাবারে রুচি বাড়ায়: আমাদের বিভিন্ন সময় পেটের রোগে এবং জ্বরে ভোগার পরে খাবারে রুচি কমে যায়। অনেক ভালো ভালো খাবার সামনে থাকার পরও খাবারের রুচি আসে না। সেক্ষেত্রে লবঙ্গ চুর্ণ সকালে খালি পেটে দুপুরে খাবারের পরে খেলে খাবারের রুচি ফিরে আসে। 

৫। হজম শক্তি বৃদ্ধি করে: আমাদের হজমের সমস্যা একটি নিত্যদিনের সঙ্গী। প্রায় দেখা যায় গুরুপাক খাওয়ার পর পেটের খাবার গুলো সহজে হজম হতে চায় না। হজমে সহায়তা করে এনজাইমনিঃসরণের মাধ্যমে এবং অ্যাসিড ক্ষরণের মাধ্যমে।  যা লবঙ্গে বিদ্যমান। তাই এটি আমাদের হজম ক্ষমতা সক্রিয় করে তোলে। এরাফ্লাটুলেন্স, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, ডিসপেপসিয়া এবং নসিয়া কমাতেও সাহায্য করে থাকে। তাছাড়া  এটি শরীরের রক্ত প্রবাহেরও উন্নতি ঘটাতে পারে।

৬। ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে:  বর্তমান সময়ে ডায়বেটিস খুব কম একটি রোগ। ডায়বেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে প্রয়োজনীয় ইনসুলিন তৈরি হতে পারে না। গবেষণায় পাওয়া গেছে যে, লবঙ্গের রস শরীরের ভিতরে ইনসুলিন তৈরিতে সাহায্য করে ও কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। পাশাপাশি রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তে শকর্রার মাত্রা বৃদ্ধির আশঙ্কা কমে যায়। নিয়মিত লবঙ্গ খেয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। 

৭। শ্বাস কষ্ট কমায়: শ্বাসকষ্ট রোগের চিকিৎসায় লবঙ্গের ভূমিকা অনেক। লবঙ্গ চিবিয়ে রস গিলে খেলে শ্বাস কষ্ট ও হাঁপানি রোগ থেকে উপোষম পাওয়া  যায়। 

৮। ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: ক্যান্সার প্রতিরোধ হিসেবে লবঙ্গ অনেক বেশি ভূমিকা পালন করে থাকে। লবঙ্গ ব্রেস্টক্যান্সার, ওভারিয়ান ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে।

৯। মুখের দুর্গন্ধ দূর করে: মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে লবঙ্গের ভূমিকা অনেক। মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে প্রতিদিন রাতে ঘুমাবার সময় ২টি লবঙ্গ মুখে দিয়ে চিবিয়ে ঘুমিয়ে যেতে হবে। এভাবে কয়েকটি মুখে রেখে চিবালেই আপনার নিঃশ্বাস হয়ে উঠবে সতেজ। দূর হবে মুখের যত দুর্গন্ধ।  

১০। জ্বর কমাতে: লবঙ্গে থাকা ভিটামিন K এবং E, রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এতটাই শক্তিশালী করে দেয় যে শরীরে উপস্থিত ভাইরাসে রাসব মারা পরে। ফলে ভাইরাল ফিবারের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না। প্রসঙ্গত, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার হয়ে যাওয়ার পর সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়।

১১। রক্ত পরিশোধন করতে: লবঙ্গ শরীর থেকে ক্ষতিকর বিশেষ উপাদানগুলো সরিয়ে ফেলে। ফলে রক্তকে পরিশোধন হয় ও রক্ত পরিস্কার হয়।


লবঙ্গ খাওয়ার নিয়ম: 

লবঙ্গ এক প্রকার মসলা হওয়ায় রান্নার আমরা লবঙ্গ ব্যবহার করে থাকি। 

রান্নার মসলা ছাড়াও আর যে যে ভাবে খাওয়া যায়:

১। চায়ের সঙ্গে খাওয়া যায়। চয়ের পানি গরম করার সময় ৪-৫ টা লবঙ্গ দিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। 

২। গরম পানিতে ফুটিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

৩। মধুর সঙ্গে লবঙ্গ মিশিয়ে খাওয়া যায়।

৪। সকালে খালি পেটে লবঙ্গ খেলে উপকার বেশি পাওয়া যায়।

৫। তাছাড়া মুখে নিয়ে চিবিয়ে খাওয়া যায়। 


লবঙ্গের অপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া:

লবঙ্গের অনেক উপকার থাকলেও প্রত্যেক খাবারের যেমন কিছু ভালো গুন থাকে তেমনি থাকে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। তায় লবঙ্গের ভালো দিক এর পাশাপাশি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও রয়েছে।

১। বেশি লবঙ্গ খেলে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

২। লবঙ্গের তেল  বেশি বেশি ব্যবহার করার ফলে এলার্জি দেখা দিতে পারে।

৩। বেশি পরিমাণে লবঙ্গ খেলে শরীরের রক্ত পাতলা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।


আরও পড়ুন: 


Post a Comment

0 Comments