চিয়া সিডের যতো স্বাস্থ উপকারিতা:
ছবি: সংগ্রহীত।
চিয়া হচ্ছে সালভিয়া হিসপানিকা নামক মিন্ট প্রজাতির একটি উদ্ভিদের বীজ। এই বীজ মূলত মধ্য আমেরিকা,পেরু, আর্জেন্টিনা, মেক্সিকোর ও মরুভূমি অঞ্চলে বেশি জন্মে।
মূলত আমেরিকা হলো চিয়া বীজের পূর্ব জন্মস্থান। মধ্য আমেরিকার প্রাচীন অধিবাসীদের কাছে সোনার চেয়েও মূল্যবান ছিলো এই বীজ। জানা গেছে তাদের খাদ্য তালিকায় শীর্ষ স্থানে ছিল এই বীজ। তবে বর্তমানে বাংলােশের অনেক অঞ্চলে এখন চিয়া সিড জন্মায়।চিয়া সিড দেখতে অনেকটা তোকমা দানার মতো। তবে এটি তোকমা দানার চেয়ে কিছুটা ছোট আকৃতির হয়ে থাকে। এটি অনেকটা সাদা ও কালো রঙের ছেট বীজ আকৃতির হয়ে থাকে।
চিয়া সিডের পুষ্টি উপাদান:
বীজ জাতীয় যেকোনো খাবারই স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারি হয়। তবে চিয়া সিডের পুষ্টিগুণের কারনে এটিকে সুপারফুডও বলা হয়ে থাকে। এ বীজে আছে প্রচুর ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, কোয়েরসেটিন, কেম্পফেরল, ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড ও ক্যাফিক এসিড নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় খাদ্য আঁশ। যা মানবদেহের জন্য অনেক উপকারি। তবে এদেশের অনেকে এর পুষ্টিগুণ ও খাবার নিয়ম না জানার কারণে এ বীজের পুষ্টিগুণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
চিয়া সিডের পুষ্টির পরিমান:
প্রতি 100 গ্রাম চিয়া সিডে আছে,
ক্যালোরি: 486
জল: 6%
প্রোটিন: 16.5 গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট: 42.1 গ্রাম
সুগার: 0 গ্রাম
ফাইবার: 34.4 গ্রাম
ফ্যাট: 30.7 গ্রাম
স্যাচুরেটেড: 3.33 গ্রাম
মনোস্যাচুরেটেড: 2.31 গ্রাম
পলিঅনস্যাচুরেটেড: 23.67 গ্রাম
ওমেগা -3: 17.83 গ্রাম
ওমেগা -6: 5.84 গ্রাম
ট্রান্স: 0.14 গ্রাম।
এটিতে আছে কমলার থেকে ৭ গুণ বেশি ভিটামিন সি, দুধের চেয়ে ৫ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম, পালং শাকের চেয়ে ৩ গুণ বেশি আয়রন, কলার চেয়ে ২ গুণ পটাশিয়াম, মুরগির ডিম থেকে ৩ গুণ বেশি প্রোটিন, এতে আছে সামুদ্রিক মাছ স্যামন এর চেয়ে ৮ গুণ বেশি ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড। তাই খাদ্য তালিকায় চিয়া সিড রাখা অনেক বেশি বুদ্ধিমানের কাজ।
চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা:
১। রোগ প্রতিরোধে: এ বীজে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও বৃদ্ধি ও শক্তিশালী করে তোলে।
২। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রনে: রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রনে চিয়া সিডের ভূমিকা অনেক। এ বীজে আছে ওমেগা-৩, যা শরীরের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রন করে ও হৃদরোগের ঝুঁকি কোমায়।
৩। শক্তি বৃদ্ধিতে: এটি শরীরের শক্তি ও কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে অনেক বেশি সাহায্য করে।
৪। ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রনে: চিয়া সিড ব্লাড সুগার স্বাভাবিক রাখতে অনেক ভূমিকা রাখে। যা ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমাতে অনেক বেশি কাজ করে।
৫। ওজন কমাতে: এটি শরীরের মেটাবলিক সিস্টেমকে উন্নত করার মাধ্যমে ওজন কমাতে সহায়তা করে থাকে।
৬। হাড়ের ক্ষয় রোধে: হাড় ক্ষয় রোধের অন্যতম কারণ ক্যালসিয়ামের অভাব। এতে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম। যা হাড়ের ক্ষয় রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে।
৭। ক্যান্সার প্রতিরোধ করে: এটি ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ ভুমিকা রাখে। পাশাপাশি কোলন পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে। ফলে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমে যায়।
৮।শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে: এটি শরীর থেকে বিষক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। পাশাপাশি শরীরের জয়েন্টের ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।
৯। পেটের সমস্যা দূর করে: প্রতিনিয়ত চিয়া সিড খেলে হজম ভালো হয় পেটের সমস্যা ও গ্যাসের সমস্যা দূর করে।
১০। ত্বক, চুল ও নখ সুন্দর রাখে: চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ শরীরের বিভিন্ন অংশের পাশাপাশি ত্বক, চুল, ও নখের সন্দর্যে রক্ষায় অনেক বেশি ভূমিকা রাখে।
চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম :
১ গ্লাস পানিতে ২ চা চামচ চিয়া সিড ভিজিয়ে রাখতে হবে ৩০ মিনিট মতো। তারপর সকালে খালি পেটে খেতে হবে। সকালে খাবার ৩০ মিনিট আগে এটি খাবার উপযুক্ত সময়। চিয় সিডের কোনো স্বাদ ও গন্ধ নেই। তাই স্বাদের জন্য পাতি লেবুর রস, মধু অথবা হালকা লবন যুক্ত করে নতে পারেন। তবে চিনি যুক্ত না করবেন না। এটি সবরত হিসাবে ছাড়াো বিভিন্ন খাবার বা সালাদের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়।
0 Comments