Add

জলবসন্ত রোগ , জলবসন্ত রোগের লক্ষণ ও সাবধানতা:

জলবসন্ত রোগ:


জলবসন্ত রোগ
চিত্র:সংগ্রহীত।


শীতের শেষে বা বসন্তের মনরম আবহাওয়ায় রোগ–জীবাণুর সংক্রমণ বেশি দেখা দেয়। সিজনাল ভাইরাস জনিত ঠান্ডা কাশির পাশাপাশি এ সময়ের অন্যতম একটি কমন রোগ জলবসন্ত বা চিকেন পক্স। এটি অত্যান্ত একটি সংক্রমক রোগ। পূর্বে এ রেগ নিয়ে অনেক কুসংস্কার থাকলেও বর্তমানে এটি তেমন কোনো গুরুতর রোগ নয়। নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার ও কিছু বিধিনিষেধ মেনে চললে এটি থেকে দ্রুত মুক্তি লাভ করা যায়। 


জলবসন্ত রোগের লক্ষণ: 

এ রোগের প্রথমে সম্পূর্ণ শরীর ব্যাথা ও হালকা জ্বর দিয়ে শুরু হয়। তাছাড়া মাথাব্যাথা ও পাতলা পায়খানাও দেখা দিতে পারে। সাধারণত এই রোগ হলে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট ফোড়ার মতো আকৃতি ধারণ করে।  যার ভিতরে আস্তে আস্তে পানি জমে। মূলত এ কারণেই একে জলবসন্ত রোগ বলা হয়।  সময় বাড়ার সাথে সাথে এটি পাকতে শুরু করে এবং ভিতরে জমা পানি গুলো অনেকটা পূঁজে রূপান্তরিত হয়। এ রোগ থেকে রোগী সাধারণত ৭-১৪ দিনের মধ্যেয় মুক্তি পেয়ে যায়। তবে শরীরের দাগ সারতে কয়েক সপ্তাহ সময় লেগে যেতে পারে।


জলবসন্ত হলে কিছু সাবধানতা: 

১। প্রতিদিন ২ বার জামা-কাপড়, বিছানার চাদর বদলানো প্রয়োজন। তাছাড়া প্রতিদিন ব্যবহারের জিনিস রোদে দিলে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে আসে। 

২। এ রোগে আক্রান্ত হলে সাধারনত সারা গায়ে ছোট ছোট উচু ফোড়ার আকৃতি ধারণ করে। তায়  সুতি কাপড়ের পোশাক পরা সবচেয়ে ভালো।

৩। আক্রান্ত স্থানে কখনো নখ লাগানো উচিত নয়। নক বা যে তোনো কিছু দিয়ে খোচালে ত্বক এ  স্থায়ীভাবে পক্সের দাগ থেকে যেতে পারে। তাছাড়া সংক্রমণও ছড়াতে পারে অনেক বেশি। তাই শিশুদের শরীরে পক্স  হলে তাদের নখ ছোট করে কেটে দেওয়া উত্তম। 

৪। বেশি পরিমানে চুলকানি অনুভব করলে চুলকানি কমাতে অলিভ অয়েল বা ক্যালামাইন লোশন লাগাতে পারেন। তাছাড়া যদি বেশি সমস্যা অনুভব করেন তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা ভালে। 

৫। রোগিকে সাধারণ পানি দিয়ে গোসোল করানো যাবে তবে শরীর মোছার সময় ঘষাঘষি করা যাবে না ।  আলত করে পানি মুছে নিতে হবে। তবে বেশি জর থাকলে গোসল না করে নরম ভেজা কাপড় দিয়ে শরীরর মুছে দেওয়া যেতে পারে।


জলবসন্ত রোগ  হলে সবচেয়ে বেশি সমস্যা দেখা দেয় কোন খাবারটি খাওয়া যাবে ও কোন খাবারটি খাওয়া যাবে না এটা নিয়ে। পূর্বের কুসংস্কার অনুযায়ী এই রোগ হলে বিভিন্ন খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হত। অথচ সেই খাবার গুলোর অনেকটা শরীরের জন্য এ অবস্থায় বেশি মাত্রই প্রয়োজন।

আসুন জেনে নেই জনবসন্ত হলে কোন খাবারগুলো খাওয়া উচিত ও কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত: 

না খেলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। অনেকে কুসংস্কারের বসে রোগীকে প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খেতে নিষেধ করেন, যা রোগীর শরীর আরও দুর্বল করে দেয়।

এ কারণে জলবসন্ত রোগ  হলে কী খাওয়া যাবে ও কী খাওয়া যাবে না, সেটা জানা উচিত। এ রোগে আক্রান্ত রোগীর শরীরে প্রদাহ ও ব্যথা থাকে। অনেক সময় মুখে ও মুখগহ্বরে ক্ষত থাকতে পারে। এ কারণে খাবার হতে হবে সহজপাচ্য, কম মসলা ও লবণযুক্ত। খেয়াল রাখতে হবে খাবারে যেন বেশি পরিমাণ ভিটামিন, খনিজ পদার্থ ও ক্যালরি থাকে। একবারে রোগী বেশি খেতে পারবে না বলে বারবার খাওয়াতে হবে। এ ছাড়া অনেকে আক্রান্ত শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ রাখেন, যা ঠিক নয়। শিশুকে অবশ্যই বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।


জলবসন্ত  হলে কী কী খাবার খাবেন?

১।রোগীকে বেশি ক্যালোরি, ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানো প্রয়োজন। তাছাড়া পাতলা  স্যুপও খাওয়াতে পারেন।

২।এ সময় ডাল খাওয়া খুবই উপকারী। ডাল খেলে শরীরের পুষ্টি অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়।

৩। বিভিন্ন ফলের রসও খাওয়া যেতে পারে। যা  শরীরের পুষ্টি যোগাতে সাহায্য করবে। তবে লেবুর রস খাওয়ানো থেকে বিরত থাকা ভালো। 

৪। ডাবের পানি এ সময় একটি আদর্শ খাবার হতে পারে। ডাবের পানি খেলে শরীর ঠান্ডা হয়। যার ফলে রোগী আরাম অনুভব করবে। 


জলবসন্ত  হলে কোন কোন  খাবারগুলো খাবেন না?

১। সকল প্রকার  চর্বি জাতীয় খাবার।  যেমন- ঘি,  মাখন, তেল, পনির, নারকেল জাতীয় খাবার না খাওয়া উত্তম। এ খাবারগুলোতে  অতিরিক্ত ফ্যাট থাকার ফলে  এ রোগের প্রদাহ বাড়িয়ে তুলতে পারে।

২। এ রোগে আক্রন্ত হলে অতিরিক্ত ঝাল, তেল-মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না। কারণ বসন্ত হলে মুখের ভেতরেও ক্ষত সৃষ্টি হয়। তায় বেশি ঝাল- মসলা যুক্ত খাবার খেলে প্রদাহ বেড়ে যেতে পারে।

৩। সকল পারকার বাদাম জাতীয় খাবার, যেমন: চিনাবাদাম, আখরোট, কিসমিশের মতো খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকেন। এ খাবারে অর্গিনিন নামে এক প্রকার অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে। যা চিকেন পক্সের জীবাণুর বংশবিস্তার করতে সাহায্য করে। তায় সময় এগুলো না খাওয়া উত্তম।

৪। অতিরিক্ত লবণ শরীরের জন্য সব সময়ই ক্ষতিকর। তাছাড়া জলবসন্ত রোগে আক্রান্তের সময়  অতিরিক্ত লবন মুখের ক্ষত বাড়িয়ে তুলতে পারে। তায় এ সময় অতিরিক্ত লবন এড়িয়ে চলা উচিত।


চিকিৎসা : 

যেহেতু এটি একটি ছোঁয়াচে  রোগ তাই এ রোগের লক্ষণ দেখা দিলে রোগীকে আলাদা করে রাখা ভালো। বাচ্চাদের এ রোগ দেখা দিলে তাদের বিছানা আলাদা রাখুন। নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহণ করলে ও উপরের নির্দেশনা অনুযায়ী চললে তেমন কোন চিকিৎসা ছাড়াই রোগী সুস্থ হয়ে উঠবে। সাধারণত এ রোগের তেমন কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে না। তবে অধিক চুলকানি, জ্বর, মাথাব্যথা ও পাতলা পায়খানা হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু ঔষধ খাওয়া যেতে পারে।


আরও পড়ুন: 



Post a Comment

0 Comments