Add

দাদ রোগের প্রধান কারণ, লক্ষণ, ও নিয়ন্ত্রনের ঘরোয়া উপায়:

দাদ রোগ: 



ring-worm
ছবি: সংগ্রহীত।


দাদ এমন একটি চর্মরোগ যা আমাদের শরীরের যেকোনো জায়গায় হতে পারে। এই ছোঁয়াচে রোগটি সাধারণত ছাত্রক বা ফাঙ্গাল ইনফেকশনের কারণে হয়ে থাকে।   আর এটি হলে দ্রুত সঠিক চিকিৎসা না নিলে যেন ভুগান্তির শেষ নেই। যথা সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করলে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।


দাদ রোগের প্রধান লক্ষণ: 

দাদ রোগটি অন্যসব সাধারণ চুলকানি দিয়ে শুরু হলেও প্রথম দিকে হালকা র‍্যাশ বা  ফুসকুড়ি হয়ে থাকে। এই  দেখতে অনেকটা গোল রিংয়ের মতো হয়ে থাকে। প্রথম অবস্থায় হালকা লালচে রঙের হয়। তবে রোগের সময় ও ত্বকের বর্ণভেদে  হালকা বাদামি রঙের হয়ে থাকে।

এ রোগে হলে ত্বকের  উপরিভাগে ছোটো ছোটো আঁইশ রিংয়ের মতো হতে পারে।  আক্রান্ত  স্থানের ত্বক খসখসে বা শুকনো হতে পারে। অনেক বেশি চুলকাতে পারে। চারপাশে হালকা ফুলে গিয়ে ভিতরে হালকা ক্ষত হতে পারে।  তাছাড় আক্রান্ত স্থানে লোম থাকলে সেগুলো পড়ে যেতে পারে।


শরীরের কোন কোন স্থানে দাদ রোগ বেশি হয়?

শরীরের সব জায়গায় দাদ হতে পারে। তবে কিছু কিছু স্থানে দাদ রোগ বেশি দেখা যায়। 

যেমন: কুঁচকি, পেট, নাভির আশপাশ, মাথার ত্বক, হাত, পা, পায়ের পাতা, এমনকি হাত-পায়ের নখেও এ রোগ দেখা দিতে পারে। 

আক্রান্ত স্থানভেদে দাদের লক্ষণেও ভিন্নতা আসতে পারে। যেমন, র‍্যাশের আকারে ভিন্নতা থাকতে পারে। দাদের র‍্যাশ আস্তে আস্তে বড় হয়ে আশেপাশে ছড়িয়ে যেতে পারে। আবার কখনো কখনো একাধিক র‍্যাশ দেখা দিতে পারে।


নিচে শরীরের বিশেষ কিছু স্থানের দাদ রোগ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য তুলে ধরা হয়েছে:

১। নাভির আশেপাশে: নাভির আশেপাশে দাদ রোগ অনেক বেশি দেখা যায়। সাধারণত নাভির প্রথমে হলকা রিং আকৃতির গোল চাকা দেখা যায়। তারপর প্রচন্ড চুলকানি দেখা দিতে পারে। এ স্থানের দাদ দ্রুত ছড়িয়ে যায়।

২। মাথার ত্বকে দাদ রোগ: অনেকসময় দেখা যায় মাথার ত্বকে দাদ রোগ দেখা দিতে। মাথার ত্বকে দাদ দেখা দিলে আক্রান্ত অংশের চুল পড়ে ঙটাক সৃষ্টি হয়ে যেতে পারে। টাক হয়ে যাওয়া জায়গায় লালচে রিং বা গোলাকার ও ছোটো ছোটো আঁইশযুক্ত র‍্যাশ দেখা দিতে পারে । পাশাপাশি আক্রান্ত স্থানে চুলকানি দেখা দিতে পারে। মাঝেমধ্যে আক্রান্ত জায়গায় ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে। 

৩। পা ও পায়ের আংগুলের ফাঁকে: পা ও আঙ্গুলের ফাকে যে স্থানগুলো ঢাকা থাকে সেখানে দাদ রোগ বেশ হয়ে থাকে। এ স্থানে হলে লাল আকৃতির চাকা বা রিং হওয়ার পাশাপাশি চামড়া উঠে যেতে পারে। তাছাড়া পায়ের আঙ্গুলগুলোর ফাঁকে ফাঁকে চুলকানি দেখা দেয়। সাধারণত পায়ে দাদ হলে পায়ের পাতা ও গোড়ালি ও আশেপাশের স্থানেও আক্রান্ত হয়ে যেতে পারে। মাঝেমধ্যে ফোসকা পড়তেও দেখা যায়। 

৪। পায়ের কুঁচকির ফাকে: দু পায়ের কুঁচকিতে দাদ রোগ দেখা দিতে পারে। কুঁচকিতে দাদ পায়ের  ভাঁজে লাল লাল র‍্যাশ হতে পারে। পাশাপাশি চুলকানি দেখা দেয়।


দাদ রোগ কীভাবে ছড়ায়?

দাদ মূলত একটি সংক্রামক রোগ। এটি ট্রাইকোফাইটন, মাইক্রোস্পোরাম ও এপিডার্মোফাইটন প্রকারের ফাঙ্গাস জাতীয় জীবাণুর কারণে দেহে বিভিন্ন স্থানে  সংক্রামণ ঘটায়।


এটি মূলত কয়েকভাবে ছড়ায়—

১।এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি কিংবা তার ব্যবহারের জিনিস থেকে ছড়াতে পারে। যেমন: জামা কাপড়, তোয়ালে, চিরুনি, বিছানার চাদর, বালিশ ইত্যাদি। 

২।অনেক সময় দেখাযায় দাদ আক্রান্ত প্রাণীর সংস্পর্শ থাকলে  যেমন: কুকুর, বিড়াল, গরু, ছাগল ইত্যাদি প্রাণীর থেকে দাদ ছড়াতে পারে। 

৩।তাছাড়া যেসব স্থানে দাদ রোগের জিবানু থাকে সেসব স্থান থেকে দাদ ছড়াতে পারে।


দাদ রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা:

দাদ রোগ নির্মুল করার জন্য কার্যকরী কিছু ঘরোয়া প্রতিকার রয়েছে। 

কিছু কার্যকর ঘরোয়া প্রতিকার নিচে দেওয়া হল:

১। নিম তেলে ব্যবহার: নিম হলো প্রাকৃতিক একটি মহা ঔষধ। নিম পাতা,ফল, ডাল সব উপকারি উপাদান। তাই এটি ব্যবহারের মাধ্যমে অনেক রোগের ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। 

নিম তেলের প্রকৃতিক উপাদানটির ভিতরে আছে অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রপাটিজ। যা দাদ রোগের মতো ত্বকের বিভিন্ন রোগের প্রকোপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। অল্প পরিমাণ নিম তেল নিয়ে দাদ আক্রান্ত স্থানে বারবার লাগাতে হবে । তাহলে দ্রুত দাদ রোগের সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ হবে।

২। রসুনের ব্যবহার: রসুনে আছে অ্যাজুইনা নামে এক ধরনের প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান।  যা ফাঙ্গাল ইনফেকশন কমাতে দারুন ভূমিকা পালন করে। তাই তো রিংওয়ার্মের ক্ষেত্রেও এই উপকরণ কার্যকরী হিসাবে ধরা হয়। এক্ষেত্রে কয়েক কোয়া রসুন নিয়ে সেগুলিকে ছোট ছোট করে কেটে, থেঁতলে,  পেস্ট করে নিন। তারপর সেগুলো দাদের উপর রাখুন এবং ব্যান্ডেজ বা কাপড়  দিয়ে বেঁধে রাখুন। এমনটা কিছুদিন সারা রাত রাখলেই ইনশাআল্লাহ ভালো ফলাফল পাবেন । 

৩। আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার: দাদ সমস্যা সমাধানে আপেল সিডার ভিনেগার একটি অন্যতম উপাদান। অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান হিসাবে আপেল সিডের ভিনেগার অনেক বেশি পরিচিত। দাদ রোগ নিরাময়ের জন্য কিছু তুলা বা প্যাড ভিনেগারে ভিজিয়ে রাখুন ও দিনে কয়েকবার আক্রান্ত স্থান পরিষ্কার করুন। 

৪। অ্যালোভেরার জেল ব্যবহার: অ্যালোভেরার জেলের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। এটি দাদ রোগের সমাধান হিসাবেও বিশেষভাবে ভূমিকা রাখে। এটিতে রয়েছে কার্যকরী অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান। আক্রান্ত স্থানে দিনে তিন-চার বার এ জেল লাগালে কার্যকরী সমাধান পাওয়া যায়।

৫। অর্গানিক নারকেল তেল: নারকেল তেলে  আছে কিছু ফ্যাটি অ্যাসিড।   যা ছত্রাকের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত করতে সাহায্য করে।  যার ফলে দাদ রোগে  আক্রান্ত স্থান দ্রুত সুস্থ হয়ে যেতে পারে।  আপনার যদি দাদ জনিত সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আপনি আক্রান্ত স্থানে নারকেল তেল মালিশ করতে পারেন।

৬। হলুদের ব্যবহার: হলুদে আছে অনেক ঔষধি গুণ। এটি বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক  হিসাবে ব্যবহার হয়ে আসছে।  হলুদে আছে কারকিউমিন নামক একটি যৌগ। যার অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং এর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ক্ষমতা দাদ রোগের মতো সমস্যাকে সহজে সারিয়ে তুলতে পারে। আপনি এটাকে দুইভাবে ব্যবহার করতে পারেন। 

i) খাওয়ার মাধ্যমে : খাওয়ার মাধ্যমে উপকার পেতে চা, দুধ বা খাবারে পরিমিত হলুদ যুক্ত করুন।

 ii) বাহ্যিক প্রয়োগ হিসাবে: বাহিক ব্যবহার করতে চাইলে হালকা জল বা তেলের সাথে এক চা চামচ হলুদ মেশান। এটাকে পেস্ট হিসাবে তৈরি করুন। তারপর আক্রান্ত স্থানে পেস্টটি লাগান। এটি সম্পূর্ণ শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুণ।  তারপর হালকা গরম জল দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলুন। 

৭। চা গাছের তেল ব্যবহার: চা গাছের তেল বিশেষ করে ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের মোকাবিলার জন্য অনেক বেশি কার্যকর। অধা চা চামচ চা গাছের এসেনশিয়াল অয়েলের সাথে এক আউন্স কোল্ড-প্রেসড ক্যারিয়ার অয়েল ভালোভাবে মিশিয়ে ২% ডিলিউশন তৈরি করুন। এই দাদ আক্রান্ত স্থানে দিনে কয়েকবার লাগালে ভালো ফল পাওয়া যায়। 

মনে রাখবেন সব গোল রিং বা চাকা দাদ নাও হতে পারে। তাই প্রচলিত ফার্মেসী বা হকারের কাছ থেকে মলম ক্রয় করে ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। আপনার রোগের লক্ষণের সাথে যথাযত  মিলিয়ে দাদ রোগ সনাক্ত করুন ও চিকিৎসা নিন। যথাসময়ে দাদ রোগ না সারলে প্রয়োজনে একজন চর্ম বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

আরও পড়ুন:

নখকুনি রোগের কারণ , লক্ষণ ও ঘরোয়া চিকিৎসা:


Post a Comment

0 Comments