রাতকানা রোগে
ছবি: সংগ্রহীত।
রাতকানা রোগ অনেক পুরাতন ও পরিচিত একটি রোগ। এ রোগ হলে সাধারণত রাতের বেলায় বা আলো কম থাকলে দৃষ্টিশক্তির কমে যায়। যারা এই রোগে আক্রান্ত তারা তুলনামূলক কম আলোতে খুব কম দেখতে পায় বা কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখতেই পায় না। এটা মূলত চোখের একটি রোগ। এ সমস্যাটি কোনো কোনো সময় পুষ্টির অভাব আবার কখনো কখনো জন্মগত ভাবেই হয়ে থাকে। এ রোগের মূল কারণ ভিটামিন-এ এর অভাব। তাছাড়াও রিভিন্ন কারনে রাতকানা রোগ হতে পারে।
রাতকানা রোগের প্রধান কিছু কারণ:
১। ভিটামিন-এ এর অভাব: বিভিন্ন কারণে শরীরে ভিটামিন- এ এর অভাব দেখা দিতে পারে। ভিটামিন- এ এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়ে থাকে। বাচ্চা জন্মের সময় ওজন কম হলে, শরীরে অতিরিক্ত খাদ্যের চাহিদা পূরণ না হলে অথবা অপুষ্টিতে ভোগার কারণে এই রোগ দেখা দিতে পারে।
২। হঠাত ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, হাম ইত্যাদি হলে: শরীরে হঠাত ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, হাম বা এধরনের রোগ দেখা দিলে দেহে ভিটামিনের-এ এর অভাব হয়। যথা সময়ে ভিটামিন- এ এর অভাব পূরণ না হলে রাতকানার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৩। বিশেষ ওষুধের পার্শপতিক্রিয়া : কোন কোন ওষুধ যেমন ফেনোথায়াজিন গ্রহণের ফলে রাতকানা রোগ দেখা দিতে পারে। চোখের বিভিন্ন চিকিৎসা যেমন ল্যাসিক, ফটোরিফ্রেক্টিভ কেরাটেক্টমি, রেডিয়াল কেরাটোটমির কারণেও রাতে দৃষ্টি কমে যেতে পারে।
রাতকানা রোগের কিছু লক্ষণ :
১। রাতকানা রোগের প্রধান লক্ষণ হলো কম আলোতে বা অন্ধকারে দেখতে অসুবিধা হওয়া। যখন চোখ হালকা আলোতে কম দেখা শুরু করে তখন বুঝতে হবে রাতকানা হবার ঝুকি রয়েছে।
২। সরাসরি অন্ধকার থেকে সন্ধ্যার অল্প আলোতে বা ভোরে দেখতে অসুবিধে হলে সেটা রাতকানা রোগের লক্ষণ।
৩। এ রোগ দেখা দিলে চোখ শুকিয়ে যায় ও চোখের সাদা অংশের উজ্জ্বলা ভাব কমে যায়।
৪। চোখের ভিতর ছোট ছোট ছাই রঙের বুদবুদ ভর্তি স্পট দেখা দেয়৷
৫। মাঝেমাঝে চোখের কর্নিয়া নরম হয়ে যায়৷
৬। চোখের কর্নিয়া ঘোলাটে হয়ে যায়৷ নরম কর্নিয়া ঠেলে ফোঁড়ার মতো বেরিয়ে আসতে পারে বা ফুটো হয়ে যেতে পারে৷ অথাবা কর্নিয়াতে ঘাঁ হতে পারে।
৭।চোখের অস্বস্তি দেখা দেওয়া চোখ সবসময় বিরক্তি দিতে থাকে।
৮। রাতে চলাচল করতে বা ড্রাইভিং করাতে অসুবিধা হয়।
৯। এভাবে আস্থে আস্থে অবশেষে সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
রাতকানা রোগের প্রতিরোধ:
বাচ্চা জন্মের প্রথম পাঁচ থেকে ছয় মাস শুধু বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এটি শিশুকে রাতকানা রোগ হওয়া থেকে রক্ষা করে থাকে। দুই বছর বয়স পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
ছয় মাস পর বুকের দুধের পাশাপাশি শিশুকে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবার যেমন: হলুদ ফলমূল ও শাক-সবজি, ডিম,দুধ, কলিজা, মাছ, মাংস বেশি করে খাওয়াতে হবে।
বাচ্চা অপুষ্টিতে ভুগলে নানা রকম রোগবালাই দেখা দিতে পারে। এসব রোগবালাই দেখা দিলে দেহে প্রচুর পরিমানে ভিটামিনের ঘার্তি দেখা দিতে পারে। এমতাবস্থায় দ্রুত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
চোখের বর্ণে কোনো পরিবর্তন দেখা দিলে, যেমন: সাদা হয়ে যাওয়া, ধোঁয়াটে, ঘোলা, ছিদ্র, চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
রাতকানা রোগের প্রতিকার:
যদি কোনো শিশু জন্মগত ভাবে সমস্যাটি নিয়ে জন্মে তাহলে প্রাথমিক অবসস্থায় সমস্যাটি সমাধান করা কঠিন। কারণ সেখানে জন্মগত কিছু ভিটামিনের অভাব বা ত্রুটি থেকে থাকে। তাছাড়া রাতকানা রোগ থেকে প্রতিকার পাওয়ার জন্য যথাযথ ভিটামিন ও সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে পারেন।
১। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ খাবার খেলে সেটি রাতকানা প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। যেহেতু ভিটামিন- এ এর অভাব রাতকানা রোগরর মূল কারণ তাই রাতকানা রোগের ঝুঁকি কমাতে এমন খাবারগুলি গ্রহণ করুন যাতে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন-এ রয়েছে।
২।ভিটামিন- এ এর পরিপূরক হিসাবে চিকিৎসক আপনাকে ভিটামিন-এ ক্যাপসুল দিতে পারেন। এ সমস্যায় উচ্চমাত্রায় ভিটামিন-এ ব্যবহারে কিছুটা সুফল পাওয়া যেতে পারে।
৩। প্রতিদন ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবার সবুজ শাক যেমন- কচু-শাক, পুঁইশাক, পালংশাক, মূলা-শাক ইত্যাদি শাক খাওয়া যেতে পারে।
৪। হলুদ যেসকল সবজি সেগুলো বেশি বেশি খেতে হব। যেমন- মিষ্টি কুমড়া, হলুদ ক্যাপসিকাম, গাজর ইত্যাদি৷
৫। বেশি বেশি হলুদ ফল যেমন- পাকা কাঁঠাল, পাকা আম, আনারস, বাতাবি লেবু, পেঁপে, কলা ইত্যাদি ফল বেশি বেশি খেতে হবে।
৬। প্রাণী জাতীয় খাদ্য বা প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের মধ্যে অধিক ভিটামিন - এ পাওয়া যায় দুধ, ডিমের কুসুম, কলিজা, ছোট মাছ ইত্যাদিতে। তাই রাতকানা রোগ দূর করতে হলে এজাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে।
সকল চোখে দেখার সমস্যা রাতকানা নাও হতে পারে। তাই চোখের যেকোন সমস্যায় একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের সরানোপন্ন হতে পারেন।
0 Comments