Add

নাকের পলিপের সমস্যা হওয়ার কারণ, লক্ষণ ও নিয়ন্ত্রনের ঘরোয়া উপায়:

নাকের পলিপ রোগ:

nasal-polyp
ছবি: সংগ্রহীত।


বর্তমান সময়ে নাকে পলিপের সমস্যায় অনেক বেশি কমন হয়ে পড়েছে। এ সমস্যা শিশু অবস্থায় বেশি দেখা দেয়।  আবার পরিণত বয়সেও পলিপের সমস্যায় ভোগেন অনেকে। বিশেষ করে এ রোগ শীতকালে বেশি ভোগায়। এ সমস্যার অন্যতম উপসর্গ  শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া। পলিপ মূলত মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবারহ করতে বাধা প্রদান করে। যার প্রভাবে শিশুদের বুদ্ধির বিকাশ কমে যায়। 


নাকের পলিপ কি?

নাকের পলিপ হল নাকের বা সাইনাসের আস্তরণে নরম, ব্যথামুক্ত, ননক্যানসেরাস বৃদ্ধি। এটি সাধারণত মারাত্বক সমস্যার কারণ হয় না। তবে সঠিক সময় চিকিৎসা না করা হয় তবে এটি আপনার নাককে বন্ধ করে দিতে পারে।  এমতাবস্থায় নিশ্বাস নিতে সমস্যা হয়। যা অনেক কষ্টদায়ক। 

আমরা পলিপ বলতে যা বুঝি মেডিকেলের পরিভাষায় আমরা পলিপ বলা হয় না। 


নাকের আশপাশে কিছু প্রকোষ্ঠ (সাইনাস) আছে।  যেমন:

১। ম্যাক্সিলারি  সাইনাস: এ সাইনাস চোখের হালকা নিচে  উঁচু যে হাড় থাকে তার ভেতরে থাকে।

২। ফ্রন্টাল সাইনাস: এটি মূলত কপালের সমনের দিকে থাকে বলে একে ফ্রন্টাল সাইনাস বলা হয়।

৩। ইথময়েড সাইনাস: এ সাইনাস নাক ও চোখের মাঝখানে যে ক্ষুদ্র স্থান সেখানে থাকে।

৪। স্ফেনয়েড সাইনাস: এটি মূলত চোখের পেছন দিকে থাকে। প্রাথমিক অবস্থায় পলিপ সাইনাসের ভিতরে থাকলেও পরবর্তীতে মাংস বাড়ার সাথে সাথে এটি নাকের ভিতরে চলে আসে।সাধারণত এ সাইনাসগুলো থেকে মাংস বৃদ্ধি পেয়ে নাক বন্ধ করে দেয় । সেটাকে আমরা পলিপ বলে থাকি। এটি অনেক সময় হালকা লালচে রঙের হয়ে থাকে।


উপসর্গ:

এটি মূলত ঠান্ডা জনিত রোগ। আবহাও পরিবর্তন, হঠাত ঠান্ডা লাগা, ঠান্ডা জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে এ রোগ বেশি বৃদ্ধি পায়। তাছাড়াও ধুলাবালি এ রোগ বৃদ্ধি কেরতে পারে।

১। এ রোগ হলে সাধারণত নাকে ছর্দি থাকা, নাক বন্ধ থাকা, ছর্দি পরিষ্কার নতে না চাওয়া, ছর্দিতে আঠালো ভাব বেশি দেখা যায়। রোগ বাড়ার সাথে সাথে প্রথমে আংশিক ও ধীরে ধীরে দুটো নাকই বন্ধ হয়ে আসে। 

২। এ রোগ হলে অল্প ধুলাবালি বা ধোঁয়াতে গেলেই প্রচণ্ড হাঁচি হতে পারে। তাছাড়া মাঝে মধ্যে দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হয়।

৩। নাকের ভিতরে মাংস বৃদ্ধির কারনে নাকের ঘ্রাণশক্তি অনেকাংশে কমে যায়। 

৪। এ সমস্যা দেখা দিলে অনেক সময় মাথার মামনের ভাগ ভারি অনুভব হয়। 

৫। মাঝে মধ্যে কানের ভিতর হালকা ব্যাথা বা কামড়াতে পারে। এছাড়া কানের ভেতরে শোঁ শোঁ শব্দ হতে পারে।

৬। মাঝে মধ্যে মাথা ঘুরা সমস্যা দেখা দিতে পারে। মধ্যকর্ণের এ সমস্যা থেকে অল্প-স্বল্প মাথা ঘুরানোভাব হরেও আস্থে আস্থে তা  মারাত্মক আকার ধারণ করতে  পারে।


নাকের পলিপ নিয়ন্ত্রনের ঘরোয়া উপায়: 

নাকের পলিপ বৃদ্ধি পেয়ে গেলে খুব তাড়াতাড়ি সারিয়ে তোলা মুস্কিল।  তবে ঘরোয়া কিছু পদ্ধতির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। 

পলিপ হওয়ার মূল কারণ এলার্জির সমস্যা।  তাই আমরা যদি এলার্জি সমস্যার সমাধান করতে পারি তাহলে নাকের পলিপ অনেকটা নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারবো। 


চলুন যেনে নেওয়া যাক, কিভাবে ঘরোয়া উপায়ে নাকের পলিপাস নিয়ন্ত্রন করা যায়।


১। ঘর ও ব্যবহারের জিনিস পরিষ্কার রাখা: মূলত পলিপের সমস্যা  বৃদ্ধির অন্যতম কারণ এলার্জি। আর এলার্জি বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ হলো ধুলাবালি।  আমাদের সবসময় ঘরবাড়ি ও ব্যবহারের জিনিস পরিষ্কার রাখতে হবে। ঘরে প্রয়োজনের তুলোনায় বেশি জিনিস রাখা যাবে না। ঘরের মেঝেতে কার্পেট বিছানো যাবে না। বিছানার চাদর, বালিশের কভার, লেপ- কাথা, ২-১ দিন পর পর রোদে দিতে হবে। ঘরে যেন পর্যপ্ত আলো বাতাস ঢুকতে পারে সে ব্যবস্থা রাখতে হবে। 

২। ঠান্ডা খাবার বা পানীয় থেকে দূরে থাকা: পলিপ বৃদ্ধির অন্যতম আরেকটা কারণ ঠান্ডা খাবার বা পানীয় পান করা। তাছাড়া এটি আপনার টনসিল বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।  এলার্জি সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায় ডাস্ট ও কোল্ড থেকে। তাই আমাদের সকল প্রকার ঠান্ডা খাবার যেমন: ফ্রিজের যে কোনো খাবার, আইসক্রিম, কোল্ড ড্রিংক খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। 

৩। আদা ব্যবহার: গবেষণায় দেখা গেছে আদাতে আছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ও ‍ এমন কিছু উপাদান যা আমাদের শরীরে সংক্রমণ ছড়াতে বাধা দেয়। তাছাড়াও  আদাতে আছে নানা রকম স্বাস্থ্য উপকারিতা। তবে নাকের পলিপের সমস্যা নিয়ন্ত্রনে আদা অনেক ভূমিকা রাখে। তাই রান্নায় আদার গুড়ো বা আদা ব্যবহার করা যেতে পারে। তাছাড়া বেশি উপকার পেতে  চা বানিতে আদা ব্যবহার করা যেতে পারে।

৪। হলুদের ব্যবহার: হলুদে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানসমূহ। যা আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণজনিত রোগ থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে। হলুদ এলার্জি কমাতে সাহায্য করে। যেহেতু পলিপের সমস্যা এর মূল কারণ হলো এলার্জি  তাই হলুদ খেলে এলার্জি অনেকাংশে কমে আসে। বেশি উপকার পাওয়ার জন্য হলুদ দিয়ে চা বানিয়ে খেতে পারেন। তাছাড়া  হলুদের গুড়ো যুক্ত পানি ফুটিয়ে আপনি মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। তাতে এলার্জি জনিত সমস্যা কম হয়।  পাশাপাশি পলিপসের মর্তা কমে আসে। 

৫। রসুনের ব্যবহার: রসুন মুলত আমাদের দেহে অ্যান্টোবায়েটিক হিসেবে কাজ করে। , রসুন আমাদের দেহের পাকস্থলির কার্য ক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি করে। যার মাধ্যমে আমাদের দেহের হজম প্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটে। এটি শরীরের ব্যাথা নাশক হিসাবে কাজ করে। পাশাপাশি রসুন রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে ও দেহের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই খাবার তালিকায় রসুন রাখার চেষ্টা করুন।  তবে কাঁচা রসুন খাওয়ার চেষ্টা করুন। এটি স্বাস্থের জন্য বেশি উপকার। নাকের পলিস সমস্যা সমাধানে রসুন অনেক ভুমকা রাখে। 


মূলত এসকল ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করে নাকের পলিপ থেকে দূরে থাকা যায়। পলিপের সমস্যা এর ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত নাকের ড্রপ বা মেডিসিন ব্যবহার করা উচিত নয়। তাতে আপনার অনেক বড় ক্ষতি হতে পারে। আপনার সমস্যা যদি গুরুগত মনে হয় তাহলে অবশ্যয় একজন   ই এন টি বিশেষজ্ঞের নিকট পরামর্শ গ্রহণ করুণ। 


ই এন টি রোগ সম্পর্কে আরও জানতে ভিজিট করুন: ENT

Post a Comment

0 Comments