Add

থানকুনি পাতার উপকারিতা, খাওয়ার নিয়ম ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া:

থানকুনি পাতা খাওয়ার যত উপকারিতা :



hydrocotyle-asiatica
ছবি: সংগ্রহীত।



থানকুনি পাতা পরিচিতি:


গ্রামবাংলায় থানকুনি পাতা একটি পরিচিত নাম। সাধারণত বাড়ির আঙিনায়, রাস্তার ধারে, পুকুরপাড়ে বা হারকা নরম জায়গায় এ গাছ বেশি জন্মে। মূলত এ গাছের পাতা একটি দারুণ ভেষজ উদ্ভিদ। বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে ভেষজ ঔষধ হিসেবে এ পাতার ব্যবহার অনেক আগে থেকে। এ গাছ দেখতে ছোট ও  পাতা গোলাকৃতির হয়ে থাকে।

এই থানকুনি গাছ বিভিন্ন অঞ্চলভেদে বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন: আদামনি, টেয়া, মানকি, আদানগুনি, ঢোলামনি, আদাগুনানী, মানামানি, ধূলাবেগুন, ডোলামানিক ইত্যাদি।


থানকুনি পাতার উপকারিতা:

ভেষজগুণ আছে এমন উদ্ভিের মধ্যে থানকুনি পাতায় আছে অনেক উপকারি গুণাগুণ।

 

কিছু উপকার সম্পর্কে নিচে দেওয়া হলো:



১। পেটের সমস্যা বা পিড়া কমতে: থানকুনি পাতার অন্যতম একটি গুণ হলো এটি পেটের রোগ নিরাময় করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া জন্য গ্রামগঞ্জে এর কদর অনেক। এই পাতা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। পেটে আলসারের রোগের প্রকোপ কোমায়। তাছাড়া এটি বদহজম,  পেট খারাপ বা ডায়রিয়ার চিকিৎসাতেও ব্যবহার হয়ে থাকে।

২। ক্ষত সারাতে: শরীরের যেকোনো ক্ষত হলে বা শরীরের কোথাও কেটে গেলে রক্তপাত বন্ধ করতে এই পাতা বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে। কাটা স্থানে বা ক্ষতস্থানে এই পাতা বেটে লাগালে  দ্রুত রক্তপাত বন্ধ হয় ও দ্রুত ক্ষত সেরে ওঠে। 

৩। মস্তিষ্কের বিকাশে: মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটাতে থানকুনি পাতা দুর্দান্ত কার্যকরী।
এটি স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে ভূমিকা রাখে। তাছাড়া এটিতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রচুর পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড। যা ডিমেনশিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমাতে সাহায্য করে।

৪। অবসাদ ও বিষণ্ণতা রোধে সাহায্য করে:  এ পাতায় আছে অ্যান্টিঅক্সিডান্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান, যা স্ট্রেস লেভেল কমায় এবং নার্ভাস সিস্টেমকে শান্ত ও স্বাভাবিক রাখে। যার কারণে মানুষিক চাপ, বিষন্নতা, স্ট্রেস সমস্যা কম হয়।

৫। স্ট্রেচ কমাতে সাহায্য করে: এ পাতা স্ট্রেচ মার্ক কমাতে সাহায্য করে থাকে। এ পাতায় আছে টারপিনয়েড যা শরীরে কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়ে তোলে। এটি নতুন করে স্ট্রেচ মার্ক তৈরি হতে বাধা দিয়ে থাকে। সেইসাথে বর্তামানের স্ট্রেচ মার্ক নিরাময়েও সাহায্য করে।

৬। নিদ্রাহীনতা দূর করে: যাদের  রাতে ঠিকমতো ঘুম হয় না তাদের  থানকুনি পাতা অনেক কাজে দিতে পারে। এই পাতায় আছে একাধিক অ্যান্টিঅক্সিডান্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান, যা স্ট্রেস লেভেল কমাতে সহায়তা করার পাশাপাশি স্নায়ুতন্ত্রকেও নিয়ন্ত্রণ করে। যার ফলে নিদ্রাহীনতা সমস্যা দূর হয়।

৭। শরীরের ক্ষতিকর টক্সিন বের করে: লিভার এবং কিডনির টক্সিনগুলির উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে থানকুনি। এটু শরীর থেকে টক্সিন বের করে।

৮। পায়ের ব্যথা দূর করে: পায়ের ব্যাথা বা ফোলা দূর করতে এই পাতা খুবই উপকারী। এই পাতা খেলে পায়ের ব্যথা বা ফোলা থাকলে খুব সহজে দূর হয়।

৯।ত্বকের ঔজ্জ্বলতা ধরে রাখাতে: ত্বকের যত্নে এই পাতার রয়েছে অনেক গুণাগুণ। এই পাতা বেটে মধু বা গোলাপজলের সাথে মিশিয়ে নিয়মিত মুখে লাগালে ত্বকের ঔজ্জ্বল্যতা বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি ত্বকের ব্রণ জনিত সমস্যার সমাধাণ হয়। 

১০। চুল পড়া রোধ: যাদের আনেক বেশি চুল পড়ে এবং নতুন চুল সহজে গজায় না তাদের জন্য এই পাতা অন্যতম ভূমিকা পালন করে।  আর এই সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিনবার এ পাতা বেটে মাথার ত্বকে লাগিয়ে তার ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেললে চুল পড়া বন্ধ হয় ও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
 

খাওয়ার নিয়ম:

সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে থানকুনি পাতার রস খেতে হবে। প্রথমে পরিমানমতো পাতা বেটে নিন তারপর সেই রসের সঙ্গে অল্প পরিমান মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।


 পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: 

উপকারের পামাপাশি থানকুনি পাতায় কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। তার মধ্যে নিদ্রাভাব, মাথাঘোরা, বমি ভাব, ত্বকের সমস্যার সৃষ্টি হওয়া প্রভৃতি। এছাড়া গর্ভবতী মহিলা, স্তন্যদানকারী মা, দুধের শিশু, লিভারের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি ও অস্ত্রোপচার হবে কিংবা সদ্য অস্ত্রোপচার হয়েছে এমন কোন  ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই পাতার ব্যবহারে নিষেধ রয়েছে। তাছাড়া অন্য কোনো রোগ আক্রান্ত বা কোনো রোগের চিকিৎসারত অবস্থায় এ পাতা সেবনে বা ব্যবহারে অবশ্যয় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ প্রয়োজন।



Post a Comment

0 Comments