বাদাম কেন খাবেন?
বাদাম আমাদের কাছে একটি পরিচিত শব্দ। এই বাদামে রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুন। যা আমাদের দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টির যোগান দিতে পারে। বাদামে রয়েছে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, ভিটামিন সি, ফাইবার, সেলেনিয়াম, ভিটামিন ই, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যামাইনো অ্যাসিড, পটাশিয়াম এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড এবং আরও অনেক পুষ্টিগুন। যা নানাভাবে শরীরের কাজে লেগে। নিয়মিত কেউ যদি এক মুঠো বাদাম খায় তাহলে মানুষিক চাঙ্গা রাখে, রোগবালাই থেকে দূরে রাখে।
নিয়মিত বাদাম খাওয়ার উপকারিতা জেনে নিন:
১। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়: বাদাম এমন একটি উপাদান, যা ক্যান্সার রোগকে প্রতিরোধ করে। পাশাপাশি অন্য সব রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতার বৃদ্ধি করে। তাছাড়া নানাবিধ সংক্রমণকে দূরে রাখতে পারে। এটি অ্যাক্সিডেটিভ ট্রেস কমিয়ে কোষের ক্ষত রোধ করে থাকে। ত্বকের এবং শরীরের বয়স কমাতেও সাহায্য করে।
২। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে: বাদাম এটি ভারি জাতীয় খাবার। যেটি খেলে পুষ্টি যোগানোর পাশাপাশি অল্পতে পেট ভরে যায়। যার ফলে খিদে একেবারে কমে যায়। তাই মাত্রাতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে । তাই শরীরে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ক্যালরি জমে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনাও কমে যায়।
৩। খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রন করে: ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল হার্টের রোগে আক্রান্তের হার বৃদ্ধি করতে পারে। তাই এই বিষয়ে সাবধান হওয়া প্রয়োজন। শরীরে যাতে কোনওভাবেই খারাপ কোলেস্টেরলের বৃদ্ধি না পায়, সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এই কাজটি করার জন্য প্রতিদিনের ডায়েটে বাদাম রাখুন। তাহলেই দেখবেন হার্টের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা অনেক কমে যাবে।বাদামে উপস্থিত বেশ কিছু কার্যকরি উপাদান শরীরের ভাল কোলেস্টরলের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা কমে যায়। যার ফলে হার্ট সুস্থ থাকে। সেই সঙ্গে হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
৪। ক্যান্সার থেকে দূরে রাখে : বাদামে আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যা ক্যান্সার রোগকে প্রতিরোধ করার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকাংশে বাড়িয়ে তোলে। যার মাধ্যমে নানা ধরনের সংক্রমণকে দূরে রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আরও নানা ধরনের উপকারে আসে। যেমন- অ্যাক্সিডেটিভ ট্রেস কমিয়ে কোষের ক্ষত রোধ করে, সেই সঙ্গে ত্বকের এবং শরীরের বয়স কমাতে ও স্কিনের লবন্য রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৫।পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করে: বাদাম এমন একটি খাবার যা পুষ্টিগুনে ভরা। বাদামে রয়েছে প্রায় ৩.৫ গ্রাম ফাইবার, ৬ গ্রাম প্রোটিন, ১৪ গ্রাম ফ্যাটসহ ভিটামিন-ই, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন-বি২, ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম। যা শরীরকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এক মুঠো বাদাম খেলে শরীরে মাত্র ১৬১ ক্যালরি প্রবেশ করে থাকে। যার ফলে বাদাম খেলে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
৬। হাড়ের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: গবেষণায় দেখা গেছে, বাদামে থাকা ফসফরাস শরীরে প্রবেশ করার পর এমন কিছু কাজ করে যার ফলে হাড়ের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। তাই প্রতিদিন এক মুঠো করে বাদাম খাওয়া শুরু করলে হাড়ের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যায়।
৭। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে: বাদামে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। গবেষনায় দেখা গেছে, শরীরে এই খনিজটির ঘাটতি দেখা দিলে অল্প সময়ের মধ্যেই ব্লাড প্রেসার মারাত্মক বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদি রক্ত চাপ বেশি দিন নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে, তাহলে হঠাৎ করে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক এবং কিডনির সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই দেহে যাতে কোনও সময় ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি দেখা না দেয়, সেদিকে খেয়াল রাখা একান্ত প্রয়োজন। তার জন্য বাদাম অনেক বেশি ভূমিকা রাখে।
৮। কোষেদের ক্ষমতা বেড়ে যায়: বাদামে উপস্থিত প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন-ই শরীরের প্রতিটি কোণে কোণে ছড়িয়ে থাকা কোষের কর্মক্ষমতাকে বৃদ্ধি করার সাথে সাথে শরীরে যাতে কোনওভাবে ক্ষতের সৃষ্টি না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে। ফলে বয়স বাড়লেও শরীরের উপর তার প্রভাব দ্রুত লক্ষ করা যায় না।
৯। হজমে সাহায্য করে: গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত জলে ভেজানো কাজুবাদাম খেলে দেহের ভিতর বিশেষ কিছু এনজাইমের ক্ষরণ বেড়ে যায়, যার ফলে হজমের উন্নতি ঘটতে শুরু করে। সেই সঙ্গে গ্যাস-অম্বলের প্রকোপও কমে যায় । তাই পরিমিত বাদাম খেলে হজমে অনেক বেশি সাহায্য করে থাকে।
শেষ কথা-
বাদাম অনেক উপকারি হলেও সেটি একটি নির্দিষ্ট পরিমানে খাওয়া উচিত। তবে আপনার শরীরে বাদাম উপযোগী নাও হতে পারে, বা কতটুকু উপযোগী তা জানার জন্য একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন।
0 Comments