Add

কোমর ব্যাথার কারণ : কোমর ব্যাথার প্রতিরোধ : কোমর ব্যাথায় প্রয়োজনীয় কিছু টিপস: Backs Pain:

কোমর ব্যাথার কারণ, ব্যাথার প্রতিরোধ : কোমর ব্যাথায়

 প্রয়োজনীয় কিছু টিপস:


back-pain
ছবি: সংগ্রহীত


বর্তমানে কোমরে ব্যাথা একটা সাধারণ রোগ হিসাবে প্রকাশ পাচ্ছে। সাধারণত একটু বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এ রোগের প্রকোপ যেন বেশি দেখা যায়।। কোমর ব্যথায় সরাসরি কেউ মারা না গেলেও এ রোগের ভুল চিকিৎসায় মারাত্মক ক্ষতি খুবই স্বাভাবিক, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। তবে আমাদের দেশে কোমর ব্যথা সম্পর্কে ভুল ধারণা পাশাপাশি ভুল চিকিৎসা দিনদিন বেড়েই চলছে। কিন্তু এতো তিছুর পরও কোমর ব্যথার সংখ্যা কিংবা ব্যাথার মাত্রার কোন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। 

যেকোনো অক্ষমতার বা শারীরিক চলাচল করতে না পারার মধ্যে যেসব রোগ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হয় কোমর ব্যথাকে। 

কোমর ব্যথায় যত প্রকার চিকিৎসা পদ্ধতিই প্রয়োগ করা হোক না কেন, মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ মানুষ এবং বয়স্ক মানুষের মধ্যে ৮০ শতাংশরের বেশি মানুষ জীবনের কোন না কোন সময় কোমর ব্যথায় আক্রান্ত হয়েছে বলে মনে করা হয়।

এ ধরণের রোগীদের মধ্যে ৯০ শতাংশ রোগীর ব্যথা ৭ - ৮ সপ্তাহের মধ্যে কোন চিকিৎসা ছাড়া কিংবা চিকিৎসা নিয়ে সেরে যেতে পারে। ৫ শতাংশ রোগীর ব্যথা ১০ - ১২ সপ্তাহের মধ্যে সেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে ব্যথা সেরে যাওয়া রোগীদের প্রায় ৭০ শতাংশ ভবিষ্যতে পুনরায় কোমর ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। 

এটি এমন একটি রোগ যা সারাজীবনে শুধু একবারই হবে এরকম কোনো ব্যাপার না। কোমর ব্যথা সাধারণ জরের মতই রোগ। ব্যথায় আক্রান্ত হলে সঠিক চিকিৎসা নিতে শিখতে হবে। তাহলর সময়ের সাথে সাথে ব্যথা কমে যাবে। 

কোমর ব্যাথার কিছু কারণ যেনে নিন:

 বিভিন্ন গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভৃত্তিতে জানা গেছে তোমর ব্যাথায় আক্রান্ত প্রায় ৯৫ শতাংশ রোগীদের এই রোগের সুনির্দিষ্ট কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্ত কোমর ব্যথার মারাত্মক কারণ যেমন ক্যান্সার, যক্ষা, কডা ইকুউনা সিনড্রম, ইনফেকশাস ডিজিজেস খুবই নগণ্য। যদিও মনে করা হচ্ছে মেরুদণ্ডের ক্ষয়, স্পন্ডিলোসিস, ডিস্ক হানিয়েশন, গাউট, আর্থ্রাইটিস, স্পাইনাল ক্যানেল স্টেনোসিস জনিত কারণে কোমর ব্যথা হয়।

কিন্তু এ সমস্যাগুলি যাদের কোমর ব্যথা নাই তাদের ক্ষেত্রেও দেখা দিতে পারে। একজন চিকিৎসা রোগীকে এ রোগ সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝিয়ে না বললে রোগীরা মনে করেন তাদের হয়তো কোমরে মারাত্মক কোন সমস্যা বা রোগের জন্ম হয়েছে।

বর্তমানে কোমর ব্যাথার যেসকল চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে তার বেশিরভাগই ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি এ সব চিকিৎসা গ্রহন করে রোগ ভালে হবার পরিবর্তে খারাপ হওয়ার অনেক প্রমান পাওয়া গেছে। তবে কোমর ব্যথা হলে শুধু সুনির্দিষ্ট কিছু থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ সবচেয়ে ফলেকার্যকরী বলে মনে করা হয়। 

পাশাপাশি এ রোগের নানাবিধী ওষুধ সেবনের ফলে কিডনির সমস্যাসহ নানাবিধ শারীরিক সমস্যা বেড়েই চলছে। এমনকি এপিডিওরাল ইনজেকশনের বিষক্রিয়ায় ও দীর্ঘমেয়াদী উচু মাত্রার ব্যথার ওধুষ সেবনের ফলে মৃত্যূর হার প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে।

তবে এ রোগের সর্বশেষ চিকিৎসা সার্জারি মনে করা হয়। তবে তাতেও রয়েছে নানান জটিলতা। কারন সার্জারিতে দেখা দিতে পারে বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়।

কিভাবে প্রতিরোধ করবেন: 

কোমর ব্যথা প্রতিরোধ করা সত্যিই অনেক কঠিন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেরুদণ্ডের এলাইনমেন্ট/পজিশন, হাড়-পেশীর সক্ষমতা এবং মেরুদণ্ডের স্টেবিলিটি ঠিক রাখতে পারলে কোমর ব্যথা থেকে দীর্ঘমেয়াদে ভালো থাকা যায় বলে মনে করা হয়। এই ক্ষেত্রেও ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকেরা আপনার মেরুদণ্ড ও সমগ্র শরীর অ্যাসেসমেন্ট করে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন -লাইফ স্টাইল রুটিন- দিতে পারেন।

কোমর ব্যথায় পালনীয় কিছু টিপসঃ

১। কোমরে ব্যাথা দেখা দিলে ২-৩ দিনের জন্য পূর্ণ বা আংশিক বিশ্রাম নিন। কিন্তু বিছানায় শুয়ে পূর্ণ বিশ্রাম নেওয়া থেকে বিরত থাকুন। যতটা পারেন স্বাভবিক জীবনযাপন করার চেস্টা করুন ও স্বাভাবিক চলাচলের চেস্টা করুন। 

২। নিচু থেকে কিছু তুলতে হলে সরাসরি না ঝুঁকে হাঁটু ভাঁজ করে বসুন ও তারপর তোলার চেস্টা করুন ।

৩। যেসব কারণে ব্যথা বাড়তে পারে যেমন, মেঝেতে বসা, সিঁড়িতে ওঠা-নামা করা, নিচু কমডে বসা, সামনে ঝুঁকে কাজ করা, লম্বা সময় বসা বা দাঁড়িয়ে থাকা বা হাঁটা ইত্যাদি। এসব কিছুদিনের জন্য এড়িয়ে চলুন। আর যেভাবে থাকলে ব্যথা কম মনে হয়, সেভাবে থাকার চেষ্টা করুন।

৪। ব্যথার স্থানে ব্যথার ধরন ও কারণ অনুযায়ী ব্যথার ক্রিম লাগিয়ে তোয়ালে বা নরম কাপড় দিয়ে ১৫ - ২০ মিনিট গরম সেঁক ও ১০ মিনিট ঠাণ্ডা পানির সেঁক দিন। ভালো বোধ করলে দিনে ৩-৪ বার দিতে পারেন। 

৫। হাঁটা বা চলাফেরার সময় কিছু দিন কোমরের বেল্ট ব্যবহার করতে পারেন। 

৬। যথাযথ পুষ্টিকর খাবার ও এন্টিটক্সিক খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন এবং শরীরের সঠিক ওজন বজায় রাখার চেস্টা করুন। 

৭। ঘাড়ে বা পিঠে ভারী কিছু ওঠাবেন না। পিঠে ভারী কিছু বহন করতে হলে সামনে ঝুঁকে বহন করুন।

 ৮। একটানা ৩০ মিনিটের বেশি দাঁড়িয়ে বা বসে থাকবেন না। হাঁটু না ভেঙে সামনের দিকে ঝুঁকবেন না। দীর্ঘ সময় হাঁটতে হলে উঁচু হিল নার পরা ভালো। অনেকক্ষণ একনাগাড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হলে কিছুক্ষণ পর পর পায়ের ভর পরিবর্তন করুন। প্রয়োজনে একটু বসে বিশ্রাম নিতে পারেন। 

৯। গাড়ি চালানোর সময় স্টিয়ারিং হুইল থেকে দূরে সরে না বসে সোজা হয়ে বসে চালানোর চেস্টা করুন। 

১০। চেয়ার টেবিলে বসার সময় সামনে ঝুঁকে কাজ করবেন না। কোমরের পেছনে সাপোর্ট দিন। এমনভাবে বসুন,যেন হাঁটু ও ঊরু মাটির সমান্তরালে থাকে। নরম গদি বা সিপ্রংযুক্ত চেয়ার ব্যবহার পরিত্যাগ করুন। 

১১। উপুড় হয়ে শোবেন না। ফোম বা সিপ্রংয়ের গদিযুক্ত বিছানা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। বিছানা তুলনামূলক শক্ত, চওড়া হলে এবং তোশক পাতলা ও সমান হলে ভালো হয়।

১২। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেস্টা করুন। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন।

১৩। নিয়মিত হাঁটুন, ব্যায়াম করুন বা প্রয়োজনে কাইক পরিশ্রম করুন। 

১৪। বাড়ির যাবতীয় কাজ যেমন, সবজি কাটা, রান্না, মসলা বাটা, ঘর মোছা, কাপড়কাঁচা, ঘর ঝাড় দেওয়া বা নলকূপ চাপার সময় মেরুদণ্ড সাধারণ অবস্থায় এবং কোমর সোজা রাখার চেস্টা করুন।

১৫। যাঁরা কোমরের ব্যথায় ভুগছেন, তাঁরা বিছানা থেকে ওঠার সময় সতর্ক হতে হবে। চিত হয়ে শুয়ে প্রথমে হাঁটু ভাঁজ করুন। এবার ধীরে ধীরে এক পাশে কাত হতে হবে। পা দুটি বিছানা থেকে ঝুলিয়ে দিন, কাত হওয়া দিকে কনুই ও অপর হাতের তালুর ওপর ভর দিয়ে ধীরে ধীরে উঠে বসার চেস্টা করুন।

বেশি ব্যাথা  দেখাদিলে সাধারণমানের ব্যথার ওষুধ খেতে পারেন, তারমধ্যে প্যারাসিটামলই সবচেয়ে ভালো। প্রয়োজনে ব্যথানাশক ওষুধ ও সাপ্লিমেন্ট খাওয়া যেতে পারে। তবে কোমর ব্যথায় যেকোন চিকিৎসা নেওয়ার আগেই তার প্রয়োজনীয়তা, উপকারিতা এবং অপকারিতা ভালোভাবে জানার জন্য একজন ভালো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

আরও জানুন: কিডনি নষ্ট হওয়ার অন্যতম কিছু অনিয়ম। কিডনি নষ্ট হওয়ার অন্যতম কারণ: যা মেনে চলা জরুরী।

Post a Comment

0 Comments