Add

কোলেস্টেরল বাড়লে কি হয় ? কোলেস্টেরল কমানোর উপায়: Cholesterol


ছবি: সংগ্রহীত।

কোলেস্টেরল কী?

কোলেস্টেরল বাড়লে কি হয় ? কোলেস্টেরল কমানোর উপায়:  কোলেস্টেরল (Cholesterol) হলো এক ধরনের চর্বি। এটি কয়েক ধরনের হয়ে থাকে,  যেমন, ট্রাইগ্লিসারাইড, এলডিএল, এইচডিএল এবং টোটাল কোলেস্টরল। এর মধ্যে একটা হলো উপকারী। আর বাকিগুলো শরীরের জন্য ক্ষতিকর। ক্ষতিকর যে তিনটি কোলেস্টেরল জমা হয় রক্তনালিতে। জমা হতে হতে রক্তনালির স্বাভাবিক যে রক্তস্রোত হয়  তাতে বাধাগ্রস্ত করে। এর ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। 

এই রকম কোলেস্টেরল  বাড়লে যেকোনো রক্তনালিকে আক্রান্ত করতে পারে, মস্তিষ্ককে আক্রান্ত করতে পারে, লিম্বস আক্রান্ত করতে পারে, ব্লক করতে পারে। 

যদি হার্টে হয় তো হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। যদি লিম্বসে হয় তাহলে হাঁটতে অসুবিধা হতে পারে। মস্তিষ্কে হলে স্ট্রোক হতে পারে। 

কোলেস্টেরল বাড়লে কি হয় ? কোলেস্টেরল কমানোর উপায়:

যখন রক্তের প্রবাহে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায় তখন বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে:

কোলেস্টেরল বাড়লে কি হয় ?

১। এথেরোস্ক্লেরোসিস: উচ্চ Cholesterol ধমনীর দেয়ালে কোলেস্টেরল-সমৃদ্ধ জমা (ফলক) তৈরি করতে পারে। সময়ের সাথে সাথে এই ফলকগুলি ধমনীকে সরু এবং শক্ত করতে পারে। একটি অবস্থা যা এথেরোস্ক্লেরোসিস নামে পরিচিত। এটি রক্ত ​​প্রবাহকে সীমাবদ্ধ করতে পারে এবং হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

২। হৃদরোগ: উচ্চতর কোলেস্টেরলের মাত্রা বিশেষ করে কম ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন (এলডিএল) Cholesterol হৃদরোগের জন্য একটি প্রধান ঝুঁকির কারণ। করোনারি ধমনীতে (যে ধমনীগুলি হৃদপিন্ডের পেশীকে রক্ত ​​সরবরাহ করে) তে ফলকগুলি জমা হয়। তারা এনজাইনা (বুকে ব্যথা) বা গুরুতর ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।

৩। স্ট্রোক: যখন মস্তিষ্কে রক্ত ​​সরবরাহকারী ধমনীতে প্লেক তৈরি হয় তখন তারা রক্ত ​​প্রবাহ বা ফেটে যেতে পারে। যার ফলে স্ট্রোক হয়। উচ্চ Cholesterol এই ফলকগুলির বিকাশে একটি উল্লেখযোগ্য অবদানকারী।

৪। পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ (PAD): কোলেস্টেরল তৈরি হওয়া শরীরের অন্যান্য অংশের ধমনীকেও প্রভাবিত করতে পারে। যেমন- পা। PAD এর ফলে অঙ্গে রক্ত প্রবাহ কমে যেতে পারে। যার ফলে ব্যথা, অসাড়তা এবং টিস্যুর ক্ষতি হতে পারে।

৫। উচ্চ রক্তচাপ (উচ্চ রক্তচাপ): উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধিতে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়া, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।

৬। পিত্তপাথর: পিত্তে উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা পিত্তপাথর গঠনের দিকে নিয়ে যেতে পারে। যা ব্যথা এবং হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

৭। জ্যান্থোমাস: এইগুলি চর্বিযুক্ত আমানত যা ত্বকের নীচে বা চোখের চারপাশে অত্যন্ত উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রাযুক্ত লোকেদের মধ্যে বিকাশ করতে পারে।

এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে সমস্ত কোলেস্টেরল ক্ষতিকারক নয়। উচ্চ-ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন (HDL) Cholesterol প্রায়ই ভালো কোলেস্টেরল হিসাবে পরিচিত।  রক্ত ​​প্রবাহ থেকে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল অপসারণ করতে সাহায্য করে। এলডিএল এবং এইচডিএল কোলেস্টেরলের মধ্যে একটি ভারসাম্যহীনতা, উচ্চতর এলডিএল মাত্রা এবং কম এইচডিএল মাত্রা সাধারণত কার্ডিওভাসকুলার ঝুঁকি বৃদ্ধির সাথে যুক্ত।

কোলেস্টেরল কমানোর উপায়

১। চিনি ও লবনের ব্যবহার কমান : চিনি ও লবন কোলেস্টেরল ওর জন্য দ্বায়ী।  তাই এটির ব্যবহার সীমিত করার মাধ্যমে Cholesterol নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। 

২।অতিরিক্ত ওজন কমান: অতিরিক্ত ওজন  আমাদের শরীরে নানা জটিলতা সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত ওজন ঝরানোর মাধ্যমে খারাপ কোলেস্টেরল নির্মূল করা সম্ভব। 

৩। শরীর চর্চা করুন : আমাদের দৈনন্দিন শরীর চর্চা করা অনেক বেশি জরুরী।  যা আপনার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রনে রাখতে ভূমিকা রাখে। 

৪। অ্যালকোহল / ধুমপান এড়িয়ে চলুন: মদ্যপান ও ধুমপান শরীরে নানা জটিলতার পাশাপাশি খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। যার মাধ্যমে হৃদরোগ দেখা দেয়।

৫।রেড মিট/ জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলুন: রেড মিট,  জাঙ্ক ফুড শরীরে অনেক বেশি খারাপ কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেয়। যার মাধ্যমে অনেক রোগ দেখা দেয়। 

৬।শাকসবজি ও ফলমূল গ্রহণ : শাকসবজি ও ফলমূলে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ও ফাইবার থাকে। যা খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে ও ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। 

৭। বেশি করে মাছ খান: মাছ মানবদেহে অন্যতম আমিষের যোগানদাতা। মাছে এত পরিমাণ পুষ্টিগুণ থাকে যে, সাস্থ্য রক্ষায় এটির ভূমিকা অনেক বেশি। মাছে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনসহ যথেষ্ট পরিমাণ চর্বি, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, লৌহ, ফসফরাস ইত্যাদি কার্যকরী উপাদান। মাছে খুব কম পরিমাণে ফ্যাট থাকে। মাছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। পাশাপাশি  মাছ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রনে ভূমিকা রাখে। 

৮। চিয়া সিড সেবন: বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে দাবি করা হয় নিয়মিত চিয়া বীজ খেলে শরীরে কোলেস্টরলের সমস্যা কমে। হাই ডেনসিটি কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়, কমায় লো ডেনসিটি Cholesterol (ldl)। এই ldl Cholesterol ক্ষতিকর বলে পরিচিত। এটি শুধু শুধু খাওয়া যায় না। ফল বা দইয়ের মতো বিভিন্ন ধরনের খাবারের সঙ্গে খেতে হয় এই বীজ। জলের মধ্যে ভিজিয়ে রেখে জলের সঙ্গে খাওয়া যায়। শরবতে ব্যবহার করা যায়। ফলের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়। লেবুর রসের সঙ্গে বা দুগ্ধজাত পদার্থের সঙ্গেও মিশিয়েও খাওয়া যায়। 

৯। ইসবগুল সেবন: এ ভুসি খেলে আমাদের অন্ত্রে একধরনের স্তর তৈরি হয়। যা কোলেস্টেরল শোষণে বাধা দান করে। ফলে আমাদের রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। তাই হৃদরোগীদের জন্য দারুণ একটি খাবার হলো ইসবগুল।  প্রতিদিন ঘুমাতে যাবার আগে অথবা সকালে খালি পেটে এক গ্লাস পানিতে ২ চা চামস ইসবগুল নিয়ে কিছুসময় ভিজিয়ে রেখে পান করা যায়। 

১০। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রন করুন: মানসিক চাপ অনেক সময় খারাপ কোলেস্টেরল বৃদ্ধি  করে থাকে। তাছাড়াও এটি হৃদরোগ,  স্টোক, উচ্চ রক্তচাপ সহ বিভিন্ন রোগের কারন। তাই আমাদের মানসিক চাপ কমানো ও পর্যাপ্ত ঘুম অনেক বেশি প্রয়োজন। 

শেষ কথা-

কোলেস্টেরল বাড়লে কি হয় ? কোলেস্টেরল কমানোর উপায়:

 উচ্চ Cholesterol পরিচালনা করতে এবং সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্যকর খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ওষুধ (যদি একজন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী দ্বারা নির্ধারিত হয়) এর মতো জীবনধারা পরিবর্তনের সুপারিশ করা যেতে পারে। নিয়মিত চেক-আপের মাধ্যমে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিরীক্ষণ প্রাথমিক সনাক্তকরণ এবং হস্তক্ষেপের জন্য অপরিহার্য।

আরও পড়ুন-

চোখ উঠা: চোখ উঠার কারণ লক্ষণ ও প্রতিকার - Conjunctivitis (Pinkeye)

থাইরয়েড রোগীদের জন্য ৫টি ক্ষতিকর খাবার - 5 Harmful Foods for Thyroid Patients

পালং শাকের স্বাস্থ্য উপকারিতা ও অপকারিতা - Health Benefits and Harms of Spinach

অ্যালোভেরার উপকারিতা ও অপকারিতা - Aloe vera benefits and harms

Post a Comment

0 Comments